মান্যবর প্রধান অতিথি এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ,
আজ ১ মে, মে দিবস। এ দিবসটি একদিনে আন্তর্জাতিক চেহারা পায়নি। এর পিছনে যে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে, রয়েছে অনেক রক্তঝরার কাহিনি- তা আমাদের কমবেশি সবারই জানা। মে দিবস দুনিয়ার শ্রমিকের এক হওয়ার ব্রত। আন্তর্জাতিক সংগ্রাম আর সৌভ্রাতৃত্বের দিন। মে দিবসের অর্থ শ্রমজীবি মানুষের উৎসবের দিন, জাগরণের গান, সংগ্রামের ঐক্য ও গভীর প্রেরণা। মে দিবস শোষণ মুক্তির অঙ্গিকার, সমাজতন্ত্র গড়ার শপথ।
(ads1)
আপনারা জানেন যে, ১৮৮৬ সালের ১ মে। পাঁচ লাখ শ্রমিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে প্রত্যক্ষভাবে ধর্মঘটে যোগ দিলেন। শাসকদল ও ঐক্যবদ্ধ সুবিশাল শ্রমিকের সমাবেশ ও ধর্মঘট দেখে পিছিয়ে গেল। ৩ মে। ম্যাককর্মিক হার্ভেস্টার কারখানায় চলল নির্মম পুলিশী আক্রমণ। প্রাণ হারালেন ছ’জন নিরস্ত্র শ্রমিক। আর পরের দিন ৪ মে, হে মার্কেট স্কোয়ার, সুবিশাল প্রতিবাদ সভায় পুলিশ গুলি চালাল। শহীদের রক্তে রঞ্জিত হলো হাতের নিসান।
গ্রেপ্তার করা হলো চারজন শ্রমিক নেতাকে। বিচারের নামে চললো নির্মম প্রহসন। জারি হলো ফাঁসির আদেশ। এঁরা হলেন আগস্ট স্পাইজ, পার্সনস ফিসার ও এঞ্জের। প্রতিবাদের ঝড় উঠল। ১৮৮৯ সালে ১৪ জুলাই, ফরাসি বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল প্যারিস। বাস্তিল পতনের শতবার্ষিকী। এ দিনেই প্যারিসেদ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মেলন, প্রথমদিনের অধিবেশনেই সর্বসম্মত প্রস্তাব। ১৮৯০ সাল থেকে ১ মে প্রতিবছর শ্রমিকশ্রেণির আর্ন্তজাতিক সংহতি, সৌভ্রাতৃত্ব ও সংগ্রামের দিন বলে ঘোষিত হলো। এভাবেই ১৮৮৬ সালের ঐতিহাসিক মে দিবস রূপান্তরিত হয় আর্ন্তজাতিক মে দিবস হিসেবে।
দুনিয়ার মেহনতি মানুষের সংকল্প গ্রহণের দিন। সেই সংকল্প হলো সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শ্রেণি-বৈষম্যের পুঁজিবাদী দাসত্ব শৃঙ্খল থেকে মুক্তির দৃঢ় অঙ্গীকার। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণির চিন্তাচেতনায় এনেছে এক বৈপ্লবিক তাৎপর্যময় দিন। মে দিবসকে ব্যবহার করে ব্যবহার করেছিলেন শ্রমিকশ্রেণির বৈপ্লবিক অভ্যুন্থনের বলিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে। তারই সার্থক পরিণতি ১৯১৭ সালে ঐতিহাসিক মে দিবসের শতবর্ষ শেষ হয়েছে।
মে দিবসের এ দীর্ঘ শতবর্ষের আলোয় অনেক অন্ধকার দূর হয়েছে। সংগ্রামী শ্রেণির সামনে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিগন্ত। দৃঢ় হয়েছে শ্রমিক সংহতি। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আজ রয়েছে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়; কিন্তু এখন জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ পুঁজিবাদি দাসত্ব থেকে মুক্ত নয়। মুক্ত সামন্ততান্ত্রিক শোষণ থেকে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আজ প্রবল পরাক্রান্ত। এখন তাদের নির্লজ্জ হুঙ্কার থামেনি। তাই দুনিয়াজুড়ে মে দিবসের মে বিজয় অভিজান সেখানে মূর্ত হয়ে উঠেছে সমাজতন্ত্রের সপক্ষে পুঁজিবাদ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির বৈপ্লবিক সংগ্রাম।
এ সংগ্রামি চেতনা ও চরিত্রই শ্রমজীবির ভূষণ। মে দিবস আজ আর শমিকের কাজের ঘন্টা কমানো দাবির আন্দোলন নয়। মে দিবস আজ দুনিয়ার মেহেনতি মানুষের সংগ্রামের দিন, সৌভ্রাতৃত্বের দিন। সমাজতন্ত্র কায়েম করার শপথ গ্রহণের দিন। মে দিবস এখন শ্রমিকশ্রেণির সামনে নতুন ঊষার স্বর্ণদুয়ার। অনেক রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দুর্লভ এক সম্পদ। সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।