১৭৫৭ সাল তেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যে কোনো ১০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনার সময়কালসহ একটি পোস্টার তৈরি কর

 

১৭৫৭ সাল তেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত যে কোনো ১০টি উল্লেখযোগ্য ঘটনার সময়কালসহ একটি পোস্টার তৈরি কর

পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭ সাল) :

পলাশীর যুদ্ধ ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন নওয়াব সিরাজউদ্দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর মধ্যে সংঘটিত।

এ যুদ্ধ আট ঘণ্টার মতো স্থায়ী ছিল এবং প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খানের বিশ্বাসঘাতকতার দরুণ নওয়াব কোম্পানি কর্তৃক পরাজিত হন।

এ যুদ্ধের রাজনৈতিক ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী ও ধ্বংসাত্মক এবং এ কারণে যদিও এটি ছোট খাট দাঙ্গার মতো একটি ঘটনা ছিল, তবু এটিকে যুদ্ধ বলে বাড়িয়ে দেখানো হয়।

এর ফলে বাংলায় ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য বাংলা অনেকটা স্প্রিং বোর্ডের মতো কাজ করে, যেখান থেকে ক্রমান্বয়ে ব্রিটিশ শক্তি আধিপত্য বিস্তার করে করে অবশেষে সাম্রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হয়।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষ গ্রাস করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে এশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশও এর অধীনস্থ হয়।

দ্বৈত শাসন (১৭৬৫ সাল) :

১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভ বাংলার নবাব থেকে দেওয়ানি সনদ প্রাপ্ত হলে যে শাসন প্রণালীর উদ্ভব হয়, তা ইতিহাসে দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত।

মীর জাফরের মৃত্যুর পর লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলোমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে।

এ সময় কিছু শর্ত সাপেক্ষে মীরজাফরের পুত্র নাজিম উদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসানো হয়।

শর্ত মোতাবেক নাজিম-উদ-দৌলা তাঁর পিতা মীর জাফরের ন্যায় ইংরেজদের বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ দেবেন এবং দেশীয় বণিকদের অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা বাতিল করবেন।

এই ব্যবস্থার ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠে এবং বাংলার নবাব সামান্য বৃত্তিভোগী কর্মচারীতে পরিণত হন।

১৭৭২ সালে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক বাতিল হয়।

১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল

ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৭০ সাল) :

দুর্ভিক্ষ হল কোন এলাকার ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি।সাধারনত ফসলহানি, যুদ্ধ, সরকারের নীতিগত ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়।

এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদিপশুর মড়ক, পোকাড় আক্রমন ইত্যাদি কারণেও দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়।

১৭৭০ সালে বাংলাদেশে এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।

সময়টি বাংলা ১১৭৬ সাল হওয়ায় এই দুর্ভিক্ষ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত হয়।

অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় সমগ্র দেশজুড়ে চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়।

ত্রুটিপূর্ণ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা ও খাদ্যবাজারে দালাল ফড়িয়া শ্রেনীর দৌরাত্ম্যের ফলে অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত(১৭৯৩ সাল) :

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত  ১৭৯৩ সালে কর্নওয়ালিস প্রশাসন কর্তৃক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ও বাংলার ভূমি মালিকদের (সকল শ্রেণির জমিদার ও স্বতন্ত্র তালুকদারদের) মধ্যে সম্পাদিত একটি স্থায়ী চুক্তি।

এর প্রবক্তা লর্ড কর্নওয়ালিস।

এ চুক্তির আওতায় জমিদার ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভূ-সম্পত্তির নিরঙ্কুশ স্বত্বাধিকারী হন।

জমির স্বত্বাধিকারী হওয়া ছাড়াও জমিদারগণ স্বত্বাধিকারের সুবিধার সাথে চিরস্থায়ীভাবে অপরিবর্তনীয় এক নির্ধারিত হারের রাজস্বে জমিদারিস্বত্ব লাভ করেন।

চুক্তির আওতায় জমিদারদের কাছে সরকারের রাজস্ব-দাবি বৃদ্ধির পথ রুদ্ধ হয়ে গেলেও জমিদারদের তরফ থেকে প্রজাদের ওপর রাজস্বের দাবি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপিত হয় নি।

জমিদারদের জমি বিক্রয়, বন্ধক, দান ইত্যাদি উপায়ে অবাধে হস্তান্তরের অধিকার থাকলেও তাদের প্রজা বা রায়তদের সে অধিকার দেওয়া হয়নি।

নিয়মিত খাজনা পরিশোধ সাপেক্ষে উত্তরাধিকারক্রমে জমির মালিক থাকার প্রথাগত অধিকার রায়তদের থাকলেও জমি হস্তান্তরের অধিকার তাদের ছিল না।

সরকারের বেলায় জমিদারদের অবশ্য একটি দায়দায়িত্ব কঠোরভাবে পালনীয় ছিল।

সেটি হচ্ছে নিয়মিত সরকারের রাজস্ব দাবি পরিশোধ করা।

জমিদারগণকে এ মর্মে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয় যে, তাদের কেউ নির্ধারিত তারিখে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে খেলাপি ব্যক্তির সকল জমি বা বকেয়া দাবি পূরণের উপযোগী জমি নিলামে বিক্রয় করা হবে।

শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন (১৮২১ সাল) :

বাংলার নবজাগরণের  ক্ষেত্রে  শ্রীরামপুরে প্রতিষ্ঠিত মুদ্রণযন্ত্রের ভূমিকা ছিল অনন্য।

১৮২১ সালে শ্রীরামপুরে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন বাংলার মানুষের মনকে মুক্ত করা ও জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

এতে বই-পুস্তক ছেপে জ্ঞানচর্চাকে শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পথ সুগম হয়। এ সময় অনেকে বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ করে জনমত সৃষ্টিতে এগিয়ে আসেন।

সিপাহি বিদ্রোহ (১৮৫৭ সালের ১০ মে) :

সিপাহি বিদ্রোহ বা সৈনিক বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালের ১০ মে মিরাট শহরে শুরু হওয়া ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহিদের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ।

যার মধ্যে আলেম ওলামাদের অবদান অপরিসীম। ক্রমশ এই বিদ্রোহ গোটা উত্তর ও মধ্য ভারতে (অধুনা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, উত্তর মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লি অঞ্চল ) ছড়িয়ে পড়েছিল।

এই সব অঞ্চলে বিদ্রোহীদের দমন করতে কোম্পানিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, মহাবিদ্রোহ, ভারতীয় বিদ্রোহ, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।

বঙ্গীয় আইন সভা (১৮৬১ সাল ) :

বঙ্গীয় আইন সভা (Bengal Legislative Assembly) ভারত শাসন সংক্রান্ত ধারাবাহিকভাবে সাংবিধানিক সংস্কারের চূড়ান্ত পরিণতি স্বরূপ গঠিত হয়েছিল।

১৮৬১ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রণয়ন পর্যন্ত শাসন সংস্কারের শেষ পর্যায় হিসেবে বঙ্গীয় আইন সভার আত্মপ্রকাশ।

১৯৩৫ সালের আইনে বলা হয় যে, ব্রিটিশ ভারতের সকল প্রদেশের সাংবিধানিক পরিষদ প্রাপ্ত বয়স্কদের দেয়া ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত হবে।

১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেমব্লির যাত্রা শুরু।

বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ) :

উপমহাদেশে ব্রিটিশদের শাসনতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বঙ্গভঙ্গ।

১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন শাসনকাজ পরিচালনার সুবিধার্থে তৎকালীন বাংলা প্রেসিডেন্সিকে ভেঙ্গে পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ  নামে দুটি নতুন প্রদেশে বিভক্ত করেন।

লাহোর প্রস্তাব  (১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ ) :

লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্তান প্রস্তাব, যাকে পাকিস্তানের স্বাধীনতার ঘোষণাও বলা হয়, তা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবী জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবনা।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলীম লীগের অধিবেশনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর সভাপতিত্বে মুসলিম লীগের পক্ষ হতে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের প্রারম্ভিক খসড়া তৈরি করেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান যা আলোচনা ও সংশোধনের জন্য নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সাবজেক্ট কমিটি সমীপে পেশ করা হয়।

সাবজেক্ট কমিটি এ প্রস্তাবটিতে আমূল সংশোধন আনয়নের পর ২৩ মার্চ সাধারণ অধিবেশনে মুসলিম লীগের পক্ষ হতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক সেটি উপস্থাপন করেন এবং চৌধুরী খালিকুজ্জামান ও অন্যান্য মুসলিম নেতৃবৃন্দ তা সমর্থন করেন।

মূল প্রস্তাবটি ছিল উর্দু ভাষায়।

এই সম্মেলনে ফজলুল হককে “শেরে বাংলা” উপাধি দেয়া হয়।

১৯৪০ খ্রীস্টাব্দের ২৩ মার্চ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ভারতীয় উপমহাদেশে একটি স্বতন্ত্র মুসলিম দেশের দাবী জানিয়ে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুমোদন করে।

বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান লাহোর প্রস্তাবের প্রারম্ভিক খসড়া তৈরি করেন এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবটি মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিলো লাহোর প্রস্তাবের মাঝে।

১৭৫৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল

ভারত বিভাজন (১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ) :

ভারত বিভাজন বা দেশভাগ হল ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক বিভাজন।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত ভেঙে হয়ে পাকিস্তান অধিরাজ্য ও ভারত অধিরাজ্য নামে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা হয়।

পাকিস্তান পরবর্তীকালে আবার দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামে দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

ভারত অধিরাজ্য পরবর্তীকালে ভারতীয় প্রজাতন্ত্র বা ভারত গণরাজ্য নামে পরিচিত হয়।

১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের ফলে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ও পাঞ্জাব প্রদেশও দ্বিখণ্ডিত হয়।

বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ভেঙে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য (ভারত) ও পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ (পাকিস্তান) গঠিত হয়।

পাঞ্জাব প্রদেশ ভেঙে পাঞ্জাব প্রদেশ (পাকিস্তান) ও পাঞ্জাব রাজ্য (ভারত) গঠিত হয়।

ভারত বিভাজনের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস ও অন্যান্য প্রশাসনিক

দ্বারা এবং রেলপথ ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সম্পদ দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিভক্ত করে দেওয়া হয়।

আরো দেখুন-

জানা অজানা

0 Comments

আমাদের সাথে থাকুন

Advertisement 2

Advertisement 3

Advertisement 4