স্ত্রীকে রেখে বিদেশে চাকুরী এবং প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণঃ
বর্তমানে বাস্তব অবস্থার আলোকে একটি কথা না বললেই নয়; আর সেটি হলোঃ
"যারা স্ত্রীকে একাকী রেখে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিদেশে চাকুরী করতে যায়, তাদের অবস্থা মুলতঃ শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেওয়ার মত আর কি"!!!
আমাদের সমাজের যারা বা যে সকল পুরুষ তাদের স্ত্রীকে রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরের পর বছর টাকা আয়ের জন্য অবস্থান করেন; তাদের রেখে আসা ঐ সব স্ত্রীদের অধিকাংশই পর-পুরুষের সাথে গোপনে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকে বলে দেখা যায় বা শোনা যায়। আর এই বিষয়গুলো গোপন থাকে না।
দশ দিন করতে করতে একদিন লোকদের সামনে প্রকাশ পেয়ে যায়। স্বামী হিসাবে স্ত্রীর প্রবৃত্তিগত চাহিদা পুরন করা বাধ্যতামুলক। যে পুরুষ প্রবৃত্তিগত চাহিদা পুরনে ব্যর্থ হবে তার স্ত্রী অবশ্যই বিকল্প পথে প্রবৃত্তিগত চাহিদা পুরন করবে। তবে, হাজারে ২-৪ জন নারী ভাল আছে বলে অনুমিত হয়। অধিকাংশই বিপথগামী হয়ে যায়। এটা পরীক্ষিত বিষয়।
হাদিস অনুসারে ৪ কিংবা ৬ মাস; অথচ আমাদের আলেম সমাজ ফাতওয়া দেয় চুক্তি করে যত দিন ইচ্ছা থাকা যাবে।
প্রবৃত্তিগত চাহিদা কি চুক্তি করলেই নীরব থাকে বা থাকবে? টাকার জন্য প্রবৃত্তিগত চাহিদা পুরন করা বাদ দিয়ে বিদেশে যাওয়ার দরকার কি?
এই সব ফাতওয়া হাদিসের পরিপন্থী বলে অনুমিত হয়।
নারীর প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণ তার ইসলাম স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কোন স্বামী স্ত্রীর এ অধিকার পূরণ না করলে ইসলাম কঠোর ভুমিকা দেয়। ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বে আরবে ‘ইলা’ নামে এক রীতি প্রচলিত ছিল, তাতে স্ত্রীকে শাস্তি দেয়ার জন্য স্বামী তার সাথে দৈহিক মিলন না করার প্রতিজ্ঞা করত। এভাবে মাসের পর মাস এমন কি কয়েক বছর চলে যেত। স্ত্রী তালাকের অধিকার ও পেত না। ইসলাম এই প্রথা রদ করে। ইসলাম বলে যে কেউ কোন কারণে সর্বোচ্চ চার মাস স্ত্রীকে সঙ্গ বঞ্চিত রাখতে পারবে। এর বেশী সময় হলে স্ত্রী তালাক নিতে পারবে।
দৈহিক মিলনের সময় স্বামীর কাছ থেকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভের অধিকারও সব মহিলার আছে। ইসলামী আইনবিদরা এ ব্যাপারে একমত যে এখানেও স্ত্রীকে সন্তূস্ট করার দায়িত্ব স্বামীর রয়েছে। রাসুল (সঃ) এবং তাঁর সাহাবারা (রাদিঃ) এ বিষয়ে কোন কুসংস্কারে ভোগেননি। এসব বিষয়কে আলোচনা বহির্ভূত বা গোপনীয় বা লজ্জার বলে এড়িয়ে যাননি। যার একটি উদাহরণ পাওয়া যায় হযরত ওমর (রাঃ)- এর জীবনে। রাতে তিনি নাগরিকদের অবস্থা দেখতে বেড়ুতেন।
এক রাতে এক বাড়ীর পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি শুনলেন একজন মহিলা তাঁর একাকীত্বের জন্য কাঁদছেন। তিনি তদন্ত করে জানলেন যে মহিলার স্বামী যুদ্ধে যাবার কারণে অনেক মাস অনুপস্থিত। ওমর (রাঃ) তাঁর কন্যা হাফসা (রাঃ)-এর কাছ থেকে জানলেন যে একজন মহিলা সর্বোচ্চ চার মাস স্বামী সংগ ছাড়া ভাল থাকতে পারেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) আইন জারী করলেন যে, যুদ্ধ বা ব্যবসা যে কোন উদ্দেশ্যেই কেউ বাড়ী থেকে চার মাসের বেশী অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।
ওমর (রাঃ) তাঁর মেয়ে হাফসা (রাঃ)- কে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ
এক জন নারী তার স্বামী ছাড়া কতদিন থাকতে পারে?
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন ছয় মাস বা চার মাস। তারপর থেকে তিনি কোন সৈনিককে ছয় মাসের বেশী বাহিরে থাকতে দিতেন না।
***মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাক্বীঃ ১৪/২৪৯।
এ থেকে বুঝা যায় যে বিশেষ প্রয়োজনে ৬ মাস স্ত্রী ছাড়া থাকা যায়। এর চেয়ে বেশী থাকলে স্ত্রীর সম্মতির প্রয়োজন আছে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনঃ
"যে তোমাদের উপর তোমাদের নফসের হক্ব আছে, তোমাদের স্ত্রীর হক্ব আছে, তোমরা সবার হক্ব আদায় করবে।"
***বুখারীঃ ৬১৩৯।
তাই একান্ত অসুবিধায় না পড়লে স্ত্রী ও সন্তানদের দেখাশোনা করার যে দায়িত্ব প্রত্যেক স্বামীর রয়েছে তা পালনার্থে সকলকে নিয়ে একত্রে বসাবস করাই উত্তম।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা সেই মহিলাদের নিকট গমন করো না; যাদের স্বামীরা বিদেশে আছে। কারণ, শয়তান তোঁমাদের রক্তের শিরায়, উপ-শিরায় প্রবাহিত হয়।"
***তিরমিযীঃ ১৭২।
রাসুল (সাঃ) ছিলেন সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি এবং বড় সমাজ বিজ্ঞানী।
তিনি জানতেন যে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে অন্য পুরুষ বাড়ীতে প্রবেশ করলে যেনা ব্যভিচারের রাস্তা খুলে যাবে। মানুষ যতো ভালোই হউক শয়তানের প্ররোচনায় সে পাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। আর সেই কারনেই তিনি যেনা ব্যভিচারের এই চোরা পথকেও বন্ধ করে দিয়েছেন।
অন্যতম উদাহরন হলো এটিঃ
একটি উদাহরণ পাওয়া যায় হযরত ওমর (রাঃ)- এর জীবনে। রাতে তিনি নাগরিকদের অবস্থা দেখতে বেড়ুতেন। এক রাতে এক বাড়ীর পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি শুনলেন একজন মহিলা তাঁর একাকীত্বের জন্য কাঁদছেন। তিনি তদন্ত করে জানলেন যে মহিলার স্বামী যুদ্ধে যাবার কারণে অনেক মাস অনুপস্থিত। ওমর (রাঃ) তাঁর কন্যা হাফসা (রাঃ)-এর কাছ থেকে জানলেন যে একজন মহিলা সর্বোচ্চ চার মাস স্বামী সংগ ছাড়া ভাল থাকতে পারেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) আইন জারী করলেন যে, যুদ্ধ বা ব্যবসা যে কোন উদ্দেশ্যেই কেউ বাড়ী থেকে চার মাসের বেশী অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।
স্ত্রীর প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণ বাধ্যতামূলক:
চুক্তি করে প্রবৃত্তিগত চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি???
কুরআনের দলিলের কাছে হাদিস অচল; রাসুল (সাঃ)-এর হাদিসের দলিলের কাছে সাহাবীদের (রাদিঃ) দলিল অচল, সাহাবীদের (রাদিঃ) দলিলের কাছে তাবেঈদের (রহিঃ) দলিল অচল। তাহলে এখনকার সময়কার আলেমরা সুস্পষ্ট সহীহ হাদিস থাকতে নিজেরা ফাতওয়া দেয় কিভাবে? যেমন,
নারীর প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণ তার ইসলাম স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। যার একটি উদাহরণ পাওয়া যায় হযরত উমর (রাদিঃ)- এর জীবনে।
রাতে তিনি নাগরিকদের অবস্থা দেখতে বের হতেন। এক রাতে এক বাড়ীর পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি শুনলেন একজন মহিলা তাঁর একাকীত্বের জন্য কবিতা পাঠ করে কাঁদছেন। তিনি তদন্ত করে জানলেন যে মহিলার স্বামী যুদ্ধে যাবার কারণে অনেক মাস অনুপস্থিত। উমর (রাঃ) তাঁর কন্যা হাফসা (রাঃ)-এর কাছ থেকে জানলেন যে, একজন মহিলা সর্বোচ্চ চার মাস স্বামী সংগ ছাড়া ভাল থাকতে পারেন।
অতঃপর উমর (রাঃ) আইন জারী করলেন যে, যুদ্ধ বা ব্যবসা যে কোন উদ্দেশ্যেই কেউ বাড়ী থেকে চার মাসের বেশী অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।
উমর (রাদিঃ) তাঁর মেয়ে হাফসা (রাদিঃ)- কে জিজ্ঞাসা করেছিলেনঃ
একজন নারী তার স্বামী ছাড়া কতদিন থাকতে পারে?
তিনি (হাফসা) উত্তর দিয়েছিলেন চার মাস বা ছয় মাস।
তারপর থেকে তিনি (উমর) কোন সৈনিককে ছয় মাসের বেশী বাহিরে থাকতে দিতেন না।
***মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বায়হাক্বীঃ ১৪/২৪৯।
এ থেকে বুঝা যায় যে বিশেষ প্রয়োজনে ৪-৬ মাস স্ত্রী ছাড়া থাকা যায়।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেনঃ
"যে তোমাদের উপর তোমাদের নফসের হক্ব আছে, তোমাদের স্ত্রীর হক্ব আছে, তোমরা সবার হক্ব আদায় করবে।"
***বুখারীঃ ৬১৩৯।
উপরের হাদিস অনুসারে ৪-৬ মাসের বেশী সময় স্ত্রীর প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণ না করে থাকা যাবে।
'স্ত্রীর একান্ত সম্মতির কারনে বেশী সময় থাকা যাবে'- এই কথা হাদিসে বলা নেই।
হাদিসে যেখানে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে ৪-৬ মাস সেখানে আলেমরা ফাতওয়া দেয় কিভাবে যে, স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে অধিক সময় বিদেশে থেকে টাকা আয় করা যাবে?
স্বামীর দীর্ঘ সময় অনুপস্থিতির কারনে স্ত্রী তার প্রবৃত্তিগত চাহিদা পুরনে পাপ কাজ করতে বাধ্য হবে বা আমাদের সমাজে হয়ে থাকে।
এমন অনেক উদাহরন আছে যে, বিয়ে করে ১০-২০ দিন স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়ে বা সহ-অবস্থান করে অতঃপর বিদেশে চলে গেছে টাকা আয়ের জন্য। ৪-৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশী সময়েও স্ত্রীর সাথে মিলিত/সহ-অবস্থান হয়নি। এ ধরনের সংখ্যাই অধিক। এখানে উভয়ের সমঝোতার ভিত্তিতে যত চুক্তিই করা হউক না কেন, এটা হাদিসের পরিপন্থী।
হাদিস অনুসারে ৪-৬ মাস; অথচ আমাদের আলেম সমাজ ফাতওয়া দেয় চুক্তি করে যত দিন ইচ্ছা থাকা যাবে।
চুক্তি করে প্রবৃত্তিগত চাহিদা কয়জন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বা পারবে?
হাদিস উপেক্ষা করে আলেমরা তো সমাধান দিয়েই দিয়েছে যে, চুক্তি করে যতদিন ইচ্ছা থাকা যাবে। এখানে আমাদের বলার কি আছে?
তবে, যার যার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন ব্যবস্থা যেমন সে অনুসারে চলাই ভাল। যারা প্রকৃত মুসলিম তারা আলেমদের এহেন ফাতওয়া অনুসরন করবে না বা করে না। যে সকল আলেম ফাতওয়া দেয় তারা তাদের বউকে কাছে রেখেই ফাতওয়া দেয়। আর যারা অভাগা শ্রমিক তাদের জন্যই ঐ ফাতওয়া দেয় যদিও বা তা হাদিসের পরিপন্থী হয়।
প্রবৃত্তিগত চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। আর এ কারনেই যেনা-ব্যভিচার প্রসার লাভ করে। মেয়েদের ১২-১৬ বছরের মধ্যে এবং পুরুষদের ১৮-২০ বছরের মধ্যে বিবাহ দিলে যেনা-ব্যভিচার প্রসার লাভ করবে না। প্রবৃত্তিগত চাহিদা প্রকৃতিগত বিষয়- এ কারনে ৪-৬ মাসের বেশী জামাই-বউ একে অপরকে ছেড়ে পৃথক থাকা বা অনুপস্থিত থাকা নিরাপদ নয়; যার কারনেই উমর (রাদিঃ) আইন জারী করেছিলেন।
চুক্তি করে প্রবৃত্তিগত চাহিদা নিবারন করা অসম্ভব। বরং আলেমদের উচিৎ হাদিসের আলোকে স্বামী-স্ত্রী যাতে এক সাথে থাকতে পারে সেই বিষয়ে উৎসাহিত করে আলোচনা করা এবং যে দেশে চাকুরীর জন্য অবস্থান করবে সেই দেশের সরকারের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করা যাতে যারা কাজ করবে তারা তাদের স্বামী বা স্ত্রীকে সাথে রাখতে পারে। আলেমরা তো মুসলিম দেশেই থাকে- তারা কেন বিষয়টি নিয়ে ঐ সব দেশের শরীয়াহ বিভাগের কাছে উপস্থাপন করে না? অথবা ৬ মাস অন্তর অন্তর চাকুরীজীবিদেরকে ভ্রমন খরচসহ ছুটি বাধ্যতামূলক রাখা।